পরিপূর্ণ ভালবাসা____ তানজিনা আফরিন বিথী
কেয়া আমার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতাছে।। আমি মহা বিরক্ত, পাবলিক প্লেসে এই ভর সন্ধ্যায় আমাদের এই রঙ তামাশা আশে পাশের সবার বিনোদনের খোরাক।। এমনিতেই আমি জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটির পোলাপন ভয় পাই, ঢাকা থেকে এসে এখানে প্রেম করি।।
আমি বললাম, কেয়া উঠ নইলে লাত্থি খাবি।।
সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ কইরা কান্দে আর বলে মাফ কইরা দেও, মাফ কইরা দেও।।
আমি রাগে দুক্ষে কইলাম- মাফ দিছি উঠ।।
সে চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ায়।।
আসলে, ঢাবির সূর্যসেন হল থেকে আমি জাবির খালেদা জিয়া হলে চলে আসলাম, আর সে কিনা হলের ৪১৩ নাম্বার রুম থেকে নামতে পাক্কা ১৯ মিনিট লেট।। আমি রাগে ঢাকা ফিরে যাবার জন্যে ঘুরে হাঁটা দিলাম, ঠিক এই সময় মেয়েটা আমার পা জড়িয়ে কান্নাকাটি।। এত ইমোশোনাল মাইয়া, প্রেম কইরা মহা বিপদে আছি।। ভাইগা যাইতে মন চায় আমার।। ওরে নিয়া দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম।। এই জায়গার পাবলিকরে আর কত রঙ তামাশা দেখামু, অন্যেদেরো হক আছে।।
........
আমি ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নিয়া ফালাইছি, ঢাবিতে পইড়া অই সুদূর জাবি-ফাবিতে প্রেম ট্রেম আমার পোষাইবো না।। কেয়াকে অপশনাল বানাইয়া নয়া একটা বা দুইটাও প্রেম করা যেতে পারে।।
আসলে যে যামানা, শুধু প্রেম করতে চাওয়াটাই বড় কথা।। ডিপার্টমেন্টের এক জুনিয়র মাইয়ার প্রতি আমার নজর ছিলো বহু দিনের, এইবার মনে হয় ফাইনাল কাজটা করা যেতেই পারে। মাইয়ার নাম নায়না, যেমন সুন্দর নাম তেমন সুন্দর চেহারা।। আমি প্রপোজ করলে ফিরাইতে পারবে না এটাই সত্য।।
......
ভালো মজায় আছি, একসাথে মাল্টি রিলেশনের মজাই আলাদা।। কেয়াকে এখন আরো সহ্য হয় না।। জাবিতে আগে তাও সপ্তাহে এক দুইবার যাইতাম।৷ এখন মাসেও একবার যাই না, নায়নাতে মজে খুব আনন্দে আছি।। কেয়া দেখা করার জন্যে দু'একবার ঢাকায় আসতে চাইছে, আমি ব্যস্ততা দেখাইয়া কাটাইয়া নিছি।। নায়না কেয়ার চেয়ে খালি যে সুন্দরী তা না, লম্বাও অনেক।। আর নিজ ক্যাম্পাসে প্রেম করা মানে, কম খরচে অনেক অনেক ডেট।। একদিন বিকালে ফুলার রোডে নায়নাকে নিয়ে বসে আছি, কেয়া কল দিলো।৷ সমস্যা নাই, নাম্বার কামাল লেইখা সেভ করা।। ফোন বের করে কইলাম, ধুর কামাল বেটা টাকা ধার চায়, আমার কাছে নাই।। বলে নায়নাকে দেখিয়ে ফোন কেটে পকেটে পুরে নিলাম।। আবার, কল- আমি কপত রাগ দেখিয়ে ফোন বন্ধও করে দিলাম।। নায়না আর আমার মাঝে অইসব কেয়া ফেয়ার টাইম নাই।
.......
কেয়া আমাকে বিশাল বিপদে ফালাইছে, সে হল ছেড়ে ঢাকায় আজিমপুর কলোনিতে সাবলেট বাসা নিছে।। এখানে থেকেই সে ক্যাম্পাসে ক্লাস করবে।। আর আমার কাছাকাছি থাকলে ঘন ঘন দেখা হবে।। কি মুশকিল- আমার মাথাই কাজ করছে না।। এত কাছাকাছি দুই প্রেমিকা আর আমি থাকলে, ধরা পড়া তো সময়ের ব্যাপার মাত্র।। আমি তাকে নানাভাবে বোঝালাম, সে বলে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিতে পারি রায়হান, তোমাকে না দেখে থাকা অসম্ভব আমার জন্যে।। তুমি যে আমার কি যদি বুঝতে, এভাবে দিনের পর দিন আমার সাথে না দেখা করে থাকতে না।। আমি মনে মনে কইলাম, নায়না যে আমার কি তুই যদি জানতি রে হারামি, এভাবে আর আমার পিছে সময় নস্ট করতি না।।
কেয়া যত ভালোবাসা দেখায়, আমার তত মেজাজ খারাপ হয়, তত রাগ লাগে, ইস এই মাইয়াডারে যে কিভাবে ছাড়বো উপায় খুঁজে পাই না।।
.......
হলে বইসা জরুরী ব্যক্তিগত মিটিং এ আমি।। কেয়াকে তাড়ানের উপায় নিয়া মিটিং, যার যার মত মতামত দিচ্ছে- ধুর আমার একটাও মন মত হচ্ছে না।। আমিই কইলাম শুন তোরা, আমি কেয়াকে টিএসসিতে আসতে বলবো- সে আসবে।। আর অই সময় আমি আমাদের কোন এক বান্ধবীকে নিয়ে বসে থাকবো।। কেয়া এসে আমাদের দেখবে, ওকে বুঝাবো আমার সাথের মেয়েটা আমার প্রেমিকা। ব্যাস, কেয়া আর কোনদিন আমার দিকে চাইবে না।।
একজন কইলো বান্ধবী কেন, নায়নাকে নিয়ে বসে থাক।। আমি দাঁত খিঁচিয়ে কইলাম, গাধার বাচ্চা- কেয়া কি না কি কাহিনী করে তার ঠিক আছে। আর নায়না এসব কিছু জানে নাকি?
তরে ঢাবিতে চান্স দিছে কোন হালায়।।
মোটামুটি সন্তুষ্টি নিয়েই মিটিং শেষ করলাম।।
এক বন্ধুকে কইলাম, এক কাজ কর- তুই কেয়াকে এখনি ফোন দিয়ে বল।। আমার ক্যাম্পাসে আর একটা এফেয়ার চলে।। আর ও যদি কাল টিএসসিতে আসে, আমাকে হাতে নাতে ধরতে পারবে। তারপর, যা খুশি হোক- অই মাইয়া তো আমার পিছু ছাড়বে।
......
ক্লাসের দুই একজনকে প্রস্তাব দিলাম,ভঅস্থায়ী প্রেমিকা হবার। কেউ রাজী হয় না, সবার এথিক্সে নাকি লাগতাছে।। আমি জানি জেরিন রাজী হবে, কিন্তু জেরিনের যে চেহারা- কেয়া ওরে আমার প্রেমিকা হিসেবে দেখলে বিশ্বাস না কইরা, হাসিও দিতে পারে।
সাদিয়াকে রাজী করানো গেলো, তবে মিথ্যা বলেছি- বলেছি, অই মাইয়া আমাকে সেই প্যারা দেয়, আর জাবিতেও আর একটা সম্পর্ক আছে অই মাইয়ার। আমি এইডারে ছাড়তে চাই।। সাদিয়া রাজী, তবে স্বভাবজাত ট্রিট চাইয়া রাখছে, আমার আপত্তি নাই।।
........
প্লান অনুয়ায়ী সব কিছু রেডি, আমি আর সাদিয়া টিএসসির ভিতরে খুব কাছাকছি বসে আছি।। কেয়া আসতেছে, আমার কিছু বন্ধু বান্ধব মজা দেখার জন্যে আশে পাশের কোলাহলে মিশে আছে।
আমার মধ্যে চাপা উত্তেজনা, সাদিয়া নির্বিকায়। শুধু, আমাকে চেপে ধরে কাছে বসে আছে।।।
কেয়া আমাদের সামনে আসলো, ওকে দেখে আমি ভয়ে সাদিয়াকে ছিটকে ফেলে দাঁড়িয়ে পড়লাম।। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে এখন।। সাদিয়া আমার এই কাহিনী দেখে অন্য দিকে সরে ভিড়ে মিশে গেলো।। আমি একাই এখন কেয়ার সামনে।। কিন্তু, কেয়া একা আসে নি, সে তার ফুপা-ফুপুকে সাথে নিয়ে এসেছে। আর এই তিনজন মূর্তিমানের মত আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।।
ও হ্যাঁ, এত কথার ভীড়ে বলাই হয় নি- কেয়া আমার একমাত্র মামাতো বোন।। আর, আমার আম্মারা এক ভাই এক বোন।।
Comments
Post a Comment