শেষ চিঠি... আশরাফুল হক আশরাফ


দিনটা সব দিন এর মতই ছিল।
রোজ যেভাবে যেতাম তার সাথে দেখা করতে সেভাবেই যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ যেয়ে দেখি সে তার জায়গায় নেই। অনেক খুঁজলাম, ফোন দিলাম। কিন্তু কিছুতেই তাকে পেলাম না। ফিরে চলে গেলাম আমার বাসায়। তারপর তাকে মেসেজ দিলাম, "কই ছিলে তুমি?"
উত্তরে বলল, "বাসা থেকে বের হতে পারিনি, সরি।"
এভাবে নানান ভালোবাসার কথা মধ্যে চলছিল দিন। কিন্তু কে জানতো এই ভালবাসার শেষ এমন হবে?
আবার কিছু দিন পর তার সাথে দেখা করতে যাই।
সেইদিন আকাশটাও কেমন জানি ছিল। চারদিকে অন্ধকার বাতাস আর ধুলোবালির খেলা। মানুষগুলোকেও কেমন জানি লাগছিলো, যেন আমাকে মেরে ফেলবে। আবার চেনা জায়গাও ছিল অচেনা।
কেমন জানি বুকটা
অবশেষে তার সাথে দেখা হয়। চিন্তা করলাম বৃষ্টি নামতে পারে তাহলে একটা জায়গায় যাই। আমরা কথা বলার পাশাপাশি হাঁটা ধরলাম দুইজন দুইজন এর হাত ধরে। রাস্তার ওই পারে একটা ভালো খাবারের দোকান। কিন্তু সেই সময় শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। সে যদি আর ভিজতে না পারে তাই তাকে নিয়ে সুন্দর রাস্তা পার হচ্ছিলাম কিন্তু এক দমকা বাতাস আসার ফলে আমরা থেমে যাই রাস্তার মাঝে কিন্তু রাস্তায় আসা গাড়িটা থামতে পারে নি।
তাকে বাঁচানোটা ছিল আমার প্রথম কাজ। তাই তাকে কোন ভাবে রাস্তার ওই পারে পাঠাই আর বলি, "তোমাকে অনেক ভালোবাসি!"
আর কি?
গাড়িটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়, তা দেখে সে কাঁদতে কাঁদতে একাকার হয়ে যায়। আশেপাশে থেকে মানুষ এসে আমাকে তুলে নেয়। চোখে দেখছিলাম শুধু তার চেহারা আর এম্বুলেন্স এর সেই আওয়াজটা কানে বাজতেছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমাকে উপরওয়ালা ডাক দিল। মন চাচ্ছে না এই সুন্দর পৃথিবী আর তার হাসি ভরা মুখটাকে ছেড়ে যেতে। কি করব আর? সব অন্ধকার হয়ে গেল।
সবার কান্নার আওয়াজ কানে শুনতে পাছিলাম কিন্তু তার আওয়াজ কানে আসলনা। সে কি আমাকে ভুলে গেল? অবশেষে আমাকে একটি মাটির ঘরে রেখে সবাই আমার উপর মাটি ফেলে চলে গেল। খুব ভয় করছিল, কাউকে দেখা যাচ্ছিলনা। তার কথা খুব মনে পড়ছিল। তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমার মনে আসে।
খুব খারাপ লাগতে লাগে একলা একলা।
একটু পরে দেখি সে আসল।
মানে আমার ভালবাসা যাকে এতক্ষন মনে করছিলাম। এমা সেকি? আমার দেওয়া প্রথম উপহারের জামাটা সে পড়ে আসলো। এমনিতে একদিন ও পরেনি। তার হাতে দেখলাম একটি গোলাপ ফুল। আমার পাশে এসে দাঁড়াল। তাকে অনুভব করতে পারলাম। কিন্তু তার চোখ থেকে পড়া পানিগুলো আমাকে খুব ব্যথা দিচ্ছিলো।
তারপর সে আমার উপর তার গোলাপ ফুলটি রেখে বলে যায়, "যেখানে থেকো ভাল থেকো।"
তার চোখের পানি আর বন্ধ হলনা। তারপর সে চলে গেল।
আজ আমার এক বছর হবে এই নতুন জায়গায়।পরিবার এর সবাই এসে আমাকে দেখে চলে গেল। মনে করলাম হয়ত সে তার নতুন সংসার এ খুশি আছে।তারপর দেখালাম সে আসল সবার শেষে!
আমি অবাক!
সে এসে আমার কবরটা ধরে বলল, "কি দরকার ছিল আমাকে সেইদিন বাঁচানোর? মরে যেতাম ভালো হত। তোমাকে অনেক মিস করি। ভালোবাসি তোমাকে অনেক। ভাল থেকো। মনে করবে না যে তোমাকে ভুলে গেছি।"
তারপর সে চলে গেল। কিছু দিন পর দেখলাম একটি লাশ। দেখে মনে লাগল তাকে চিনি। হ্যা তাকে চিনি। সে আমার ভালোবাসা। তারপর তাকে বলাম কি দরকার ছিল? সে বলল, "তোমার সাথে থাকার ওয়াদা দিয়েছিলাম, আমি আর অন্য সবার মত না। তাই চলে আসলাম। এখন তোমার সাথেই থাকবো। আর তোমাকে আর কোথাও যেতে দিব না।"
আমার মনে হচ্ছিল যাক এই কথা সত্যি যে, "সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও মরে না। তারা আসে আমাদের কাছে। হয় এই দুনিয়াতে না হয় মরে গেলে ওই দুনিয়াতে!"

Comments

Popular posts from this blog

রম্য গল্প : বয়ফ্রেন্ড বিড়ম্বনা। ______________লিখা : Sumaiya Mannan Borna

আকুল আবেদেন ______তানজিনা___আফরিন____বিথী

বর্ষার ভালবাসা------ আশরাফুল হক