নীলাঞ্জনার নীড়ে



এক পশলা বৃষ্টিতে ছেয়ে গেছে পুরো শহরটা। নীলাঞ্জনার অবশ্য দুপুর থেকে মন খারাপ ছিলো, কারন তার আজকে সিয়ামের সাথে দেখা করার কথা ছিল। বৃষ্টির জন্য তার হয়ত বা ঘর থেকে বের হওয়াটা হবে না। 

সিয়ামও অপেক্ষায় আছে কখন বৃষ্টি থামবে। দীর্ঘ ৭ মাস পর আজ তাদের দেখা হচ্ছে। বিকেল বেলার দিকে বৃষ্টি থামলো। তারা একে অপরের সাথে মোবাইলে কন্ট্রাক্ট করে বাসা থেকে বের হলো দেখা করবে তাদের সেই পুরোনো ক্যাম্পাস এর সামনে যেখানে তারা তাদের জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছে। নীলাঞ্জনা সিয়ামকে খুব বেশি তাড়া করছিল, সিয়ামকে বলছিল তুমি তাড়াতাড়ি বের হও, আমার বাসা থেকে আসতে কিন্তু বেশিক্ষন সময় লাগবে না।
নীলাঞ্জনার এই কথা শুনে সিয়ামের তাড়াহুড়ো আরো বেড়ে গেল। এক দৌড়ে বাসা থেকে বের হয়ে সি,এন,জি নিয়ে চলে গেল চার রাস্থার মোড়ে। ঐ খান থেকে লোকাল বাস ধরে ক্যাম্পাস এর সামনে চলে গেল।  সিয়াম এতটাই এক্সাইটেড ছিল যে ওর সেল ফোনে চার্জ দিতেও খেয়াল ছিল না। সে বাস থেকে নেমে ক্যাম্পাসের গেইট এর সামনে দাড়ালো। মোবাইল হাতে নিয়ে যেই নীলাঞ্জনাকে কল দিবে এমনি দেখলো তার মোবাইলে চার্জ নেই। মোবাইলের সুইচ অফ।

সে ভাবছে নিশ্চয় আমার পরীটা খুব রাগ করবে আমার মোবাইল অফ পেয়ে। কিন্তু না নীলাঞ্জনা সিয়ামকে কল দিতে হয়নি।      রিকশা থেকে নেমেই সিয়েমকে দেখতে পেলো গেইট এর সামনে তার জন্য অপেক্ষা করছে।

সিয়াম নীল পাঞ্জাবি আর নীলাঞ্জনা নীল শাড়ি পরে এসেছে কিন্তু তারা আসার পূর্বে কাউকেই বলে আসিনি কে  কি পড়বে?
কাকতালীয় ভাবে দুজনের ড্রেসের রং মিলে গেল।  

বহুদিন পর তাদের ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে পাশাপাশি দুই জন হাটছে, কত স্মৃতি জড়িয়ে  আছে এই ক্যাম্পাস জুড়ে।

স্মৃতি গুলো মনের কোণে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।

নীলাঞ্জনাঃ কেমন আছো সিয়াম?
সিয়ামঃ ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?

নীলাঞ্জনাঃ আমিও ভাল।  তোমার মনে পড়ে আমরা কোথায় বসে গল্প করতাম?
সিয়ামঃ হুম।

নীলাঞ্জনাঃ কি হুম?
সিয়ামঃ মনে পড়ে। চলো তোমাকে নিয়ে যায় সেই গাছ তলায় যেখানে বসে আমরা অবসরে গল্প করতাম।

নীলাঞ্জনা ভেবে ছিল সিয়াম ভুলে গেছে সেই গাছ তলার কথা, কিন্তু না সিয়াম তাদের কাটানো মুহূর্ত গুলোর একটি মুহূর্ত ভুলেনি।
সিয়াম ঠিক ঠিকই সেই গাছ তলায় গিয়ে বসল।

শুরু হয়ে গেল তাদের কথার ফুলঝুড়ি।

ছোট বেলার খুনসুটি গুলো এখনো তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। ছোট ছোট বিষয় গুল নিয়ে ঝগড়া করা। সিয়াম দেড়ি করে দেখা করতে আসলে রাগে নাক ফুলিইয়ে রাখা।
কিন্তু সিয়াম সামনে আসলে নীলাঞ্জনা আর রাগ করে থাকতে পারে না। সিয়ামের চেহারার দিকে তাকালেয় নীলাঞ্জনার সব রাগ মাটি হয়ে যায়।

কিন্তু তারা যত কিছুই করুর তাদের ভালবাসায় ছিল একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, আস্থা । যা তাদের কখনো আলাদা করতে পারবে না।

তাদের এই সব কর্ম কান্ড নিয়ে যখন তাদের মধ্যেই সমালোচনা করে তখন তারাই এই সব নিয়ে হাসা হাসি করে আর বলে আমাদের এই পাগলামী জুড়েই রয়েছে আমাদের ভালবাসা।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে , আকাশের অবস্থাও ভাল না  আবার যেকোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। বাসাইয় ফিরে যাওয়া দরকার।

ক্যাম্পাস থেকে বের হলো দুইজন একসাথে। সিয়াম নিলাঞ্জনাযে রিকাশাইয় উঠিয়ে দিয়ে ও বাসায় যাবে।
 রিকশা ঠিক করার পর নীলাঞ্জনা যখন রিকশায় উঠে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে সে নেমে গিয়ে সিয়ামকে জড়িয়ে ধরলো। সিয়াম তো অবাক হয়ে গেল। যেই মানুষটাকে সবচেয়ে বেশি ভাল্বাসে সেই মানুষটা এই প্রথম তাকে জড়িয়ে ধরলো। সিয়াম তখন নীলাঞ্জনা ছাড়তে চাচ্ছিলো না।
তারপরেও নীলাঞ্জনা সিয়ামকে ছেড়ে রিলশায় উঠে গেল।

সিয়াম চাচ্ছিল নীলাঞ্জনার নীড়ে ফিরে যেতে।

Comments

Popular posts from this blog

রম্য গল্প : বয়ফ্রেন্ড বিড়ম্বনা। ______________লিখা : Sumaiya Mannan Borna

আকুল আবেদেন ______তানজিনা___আফরিন____বিথী

বর্ষার ভালবাসা------ আশরাফুল হক